খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না: জামায়াতের আমির
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৭
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে আমাদের মা বোনদের দুটি জিনিস বাড়তি দেয়া হবে। একটি হল মর্যাদা, অপরটি হল নিরাপত্তা। এখন তাদের সামাজিক মর্যাদা কম, নিরাপত্তা একেবারেই নাই। দুইটাই সেদিন নিশ্চিত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে দিনাজপুর গোড় এ শহীদ বড় ময়দানে দিনাজপুর জেলা জামায়েতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করার সময় দেখা হবে না, কে কোন ধর্মের। দেখা হবে সে এই দায়িত্বের উপযুক্ত কিনা। যে যে দায়িত্বের উপযুক্ত তাকে সেই দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বের রাজনীতি বিশ্বাস করি না। আমাদের উপর যে পরিমাণ জুলুম করা হয়েছে, যদি আমাদের কর্মীরা ধৈর্য না ধরতো তাহলে এদেশে অনেক প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যেত। যতটা খুন হয়েছে প্রতিটি খুনের বিচার হতে হবে। খুনের বিচার যদি না হয় তাহলে খুনের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। লুটপাটের যদি বিচার না হয় তাহলে লুটপাটের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। চাঁদাবাজদের যদি বিচার না হয় তাহলে চাঁদাবাজদের চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না। ঘুষখোরের যদি বিচার না হয় তাহলে ঘুষখোরি বন্ধ হবে না। সুতরাং সকল অন্যায়ের বিচার হতে হবে। এ বিচার আমরা দাবি করি, কিন্তু তাই বলে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিক, এটাও আমরা পছন্দ করি না। আইন আইনের গতিতে চলবে। বিচার করতে গিয়ে অবিচার হোক এটাও আমরা চাই না। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে যার যেটা পাওনা, সে যেন সেটা পেয়ে যাক। এ রকম একটা বাংলাদেশ আমরা করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই- তোমরা যে বলেছিলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তোমাদেরকে ভালোবাসি। তোমাদের অবদানের জন্য তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ এবং তোমাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করি। আগামীর বাংলাদেশ আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই। আমরা তোমাদের পাশে থেকে দোয়া করতে চাই, সাহায্য করতে চাই। মরার আগে আমরা দেখে যেতে চাই, আমার প্রিয় বাংলাদেশ সাম্য এবং সৌহার্দের বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামের দায়িত্বশীল শীর্ষ পর্যায়ের ১১ জন নেতাকর্মীকে একে একে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। পাঁচজনকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। বাকিদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আমাদের সব কয়টি কার্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল, আমাদের দলের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে। আমাদেরকে নিষিদ্ধ করেছিল। আমাদের লক্ষ লক্ষ ভাই-বোনদেরকে জেলে বন্দি করেছে। শুধু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী না, এদেশের দেশপ্রেমিক সকল সংগঠনকে প্রতিপক্ষ এবং দোষী সাব্যস্ত করে একই আচরণ করেছে। আলেম-ওলামাদেরকে কষ্ট দিয়েছে। খুন করেছে হাফেজদেরকে, খুন করেছে এতিমদেরকে। তারা উপহাস করে বলেছে শাপলা চত্বরে মানুষ মারা যায়নি, রক্ত সেখানে ঝড়েনি। হেফাজতের নেতারা সেখানে লাল রং ছিটিয়ে দিয়েছে। কত নিম্নমানের রুচি হলে মানুষ খুন করার পর কুরুচিপূর্ণ কথা শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলতে পারে।
‘তারা বলতেন গণতন্ত্রের দরকার নাই উন্নয়ন হলেই চলবে। উন্নয়ন করতে গিয়ে তারা কি করেছে লোহার পরিবর্তে বাঁশ উপহার দিয়েছে। সিমেন্টের সাথে ছাই মিশিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা অনেক সংস্কারের উপর হাত দিয়েছেন, যতটুকু সম্ভব করুন, আরেকটি বিষয়ের উপর হাত দেন। একটা নিরপেক্ষ সরকার হয়তো পারবে, দলীয় সরকার এটা করবে না। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে, যাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, সেটা খুন-ধর্ষণ-লুট-দখল যাই হোক এদের কালো তালিকা প্রকাশ করে দেন, এরা কারা জনগণ এদেরকে চিনে নিক। কোন জায়গায় কোন কিছু ঘটলেই সাথে সাথে জামায়াতে ইসলামকে দোষ দেয়, এটা এদের বদ-খাসলত। এরা জাগরণেও জামায়াতকে ভয় পায়, এরা ঘুমের মধ্যেও জামায়াতকে ভয় পায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের বসবাস করার বৈধ অধিকার রয়েছে। আমরা একটা কথা পরিষ্কার করতে চাই- এখানে বিভিন্ন ধর্মের ভাই-বোনেরা আছেন। আমরা বাংলাদেশে কোন মেজরিটি মাইনরিটি মানি না। আমরা বিশ্বাস করি এদেশে যারা জন্ম নিয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধান তাকে সমান অধিকার দিয়েছে। মর্যাদার দিক থেকে তিনি একজন মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের নাগরিক। আপনারা নিজেদেরকে মাইনরিটি মনে করবেন না।
দিনাজপুর জেলা আমির অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল ও কেন্দ্রীয় মজলিসের সুরা সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি